নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না কুমিল্লা সিটি নির্বাচন
-বিডিসি নিউজ ডেক্সঃ
দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম নির্বাচন আয়োজন নিয়ে হোঁচট খেল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রস্তুতি না থাকায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে পারবে না বলে জানিয়েছে এই কমিশন।
তবে আগামী ২০ জুনের মধ্যে এ সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। চলতি মাসের শেষের দিকে কমিশনের দ্বিতীয় সভায় এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেখানে প্রশাসক বসানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নির্বাচন কমিশনারর, ইসি সচিব ও কমিশনের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পাঁচ দিনের মাথায় এ সভা অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে এ কমিশন বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে। আজ বুধবার নির্বাচন কমিশন সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপে বসবেন।
কমিশন সভার পর সাংবাদিকদের ইসির সিদ্ধান্ত জানান সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। তিনি বলেন, ‘সীমানাসংক্রান্ত মামলা ছিল কুমিল্লা সিটিতে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে এ নিয়ে আমরা জানতে চেয়েছিলাম। তারা গত ৪ এপ্রিল জানিয়েছেন কোনো জটিলতা নেই। তবে নির্বাচনটি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে অনুষ্ঠিত হবে, এজন্য প্রস্তুতি প্রয়োজন। নির্ধারিত সময়ের পর এ নির্বাচনটি করতে হচ্ছে। বিলম্বের কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব বিলম্বে পেয়েছি। এখন ভোটার তালিকার সিডি ও ইভিএমের প্রস্তুতি মিলিয়ে আগামী ১৬ মের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আগামী ২০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এটা কনফার্ম। তফসিল হবে রমজানের শেষ সপ্তাহে।’
হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘নতুন কমিশনের প্রথম সভা হয়েছে। এ সভায় পাঁচটি এজেন্ডা ছিল। কুমিল্লা সিটি, কিছু পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচন নিয়ে দ্বিতীয় কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হবে নির্বাচন কবে হবে। তবে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জুনের মধ্যে এ নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করা হবে।’ কুমিল্লা সিটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে গেলে অনেক প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। এক মাস সময় পার হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানিয়ে দেব আমরা।’ নির্ধারিত সময়ের পরে ভোট আয়োজন হলে কোনো আইনি ব্যত্যয় হবে না বলে জানান ইসি সচিব। তিনি বলেন, নতুন কমিশনের প্রস্তুতি ছিল। এজন্য ৭ ও ৩০ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগে তাগিদ দেওয়া হয়। তবে সীমানা নিয়ে জটিলতাও ছিল। এর মধ্যে আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। এখন আমরা জানি, ইসিও নির্বাচন করার জন্য মিটিং করেছে। সবকিছু ব্যাখ্যা করার পর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমাদের এ সময়টা লাগবে। আইনি কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে বলে মনে করে না ইসি। ইসি সচিব বলেন, আইনি কোনো ব্যত্যয় ঘটবে বলে কমিশন মনে করে না। প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানানো হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চাইলে ওই সামান্য সময়ে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে। আইন অনুযায়ী আমরা নির্বাচন যে কারণে করতে পারব না, তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেব। মন্ত্রণালয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, এ সিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৬ মে। তার পরের দিনই আমরা একজন প্রশাসক নিয়োগ দেব। এক্ষেত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তি বা সরকারি কর্মচারীকে বসানো হতে পারে। কোনো করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হলে পুরো পরিষদের আর কার্যকারিতা থাকে না। এক্ষেত্রে প্যানেল মেয়র বসানোর সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ সর্বশেষ কুমিল্লা সিটির নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই বছর ১৭ মে। এক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ করতে হবে আগামী ১৬ মের মধ্যে। কর্মকর্তারা বলছেন, আইন অনুযায়ী প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর হয় নির্বাচিত করপোরেশনের মেয়াদ। এজন্য মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের ১৬ মে। আর ভোটগ্রহণ করতে হয়, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। এই হিসাবে গত বছর ১৬ নভেম্বর থেকে এ সিটি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু দ্বিতীয়বারের মতো এ সিটিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সিটিতে সে সময় ভোট হয়েছিল ১০৩টি কেন্দ্রে। মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন।