প্রিয় নীল নারী,
লম্বা হয়ে শুয়ে আছি মাটি ও ঘাসের উপর,
ঘিরে আছে শিরিষ করমচা কাঠাল বন, কি
রকম মিষ্টি গন্ধ, ছায়াহরিণ নড়ে ঘাসের উঠোনে –
শুয়ে আছি বিস্তির্ণ প্রান্তরের মত আকাশের ময়দানের
দিকে চেয়ে, শাখায় পাতায় ডাকে দোয়েল ফিঙে হলুদ পাখি;
যদি আর কখনও এমন ভাগ্য না হয়,
যদি এইই আমার অন্তিম স্পর্শ হয়, দূর প্রস্থানের
বিষন্ন আভাসে- উৎসুক জেগে ওঠে প্রিয় চন্দন ধূলো
ঘাস, মরমী প্রেমে মুখভার নিশ্চুপ মৃত্তিকা ও প্রিয়
বিপ্রলব্ধা-কত প্রেয়সি আর অনন্ত প্রকৃতি বিমূঢ় বেদনায়,
তৃণমুখে স্থির শিশিরের মত আঁখিকোণে অশ্রুর ফোঁটা।
শরীরে মিশে যায় আকাশের রঙ, স্খলিত বসনের মত
ভেসে যায় সাদা মেঘ, হলুদ রোদে প্লাবিত অরণ্য-প্রান্তর,
চারদিকে কস্তুরির মত তীব্র গন্ধ-হাত বাড়িয়ে রেখেছে
আলো-ছায়ায় রোরুদ্যমান আজন্ম প্রিয় নীল নারী,
এ জন্মে যদি আর দেখা না হয়, পাথরের মত হৃদয়ে
বেদনার ভার।
অলোকের দেশ থেকে আক্ষেপ কাতর ছোট বোনটি মাটির
অণু ভেঙে বলছেঃ আমার মেয়েটিকে দাদা তুমি কেন হেলা কর-
কতদিন দেখেছি জলের পাশে শুকনো মুখে বসে আছে মনমরা,
যেন পৃথিবীতে কেউ নেই তার- কে পারে নিয়ে যেতে তারে মরণ ও
জীবনের সাথেঃ কন্ঠ আতুর ভিজেছে গন্ড, জলে হাত বাড়াতে-
কোথায় যে হাওয়া হয়ে উবে গেল।
জেনেছি কি জীবনের অশেষ অবলোপ, রাত্রি শেষ হলে
ক্ষয়ের দ্রাঘিমা বেড়ে ওঠে, খলিফার মত যত রিফু করি
খল খল জীর্ণতা হেসে ওঠে, ছোট ছোট অপব্যয়
অপরিণামদর্শিতা বেড়ে বেড়ে জমানো অর্থে টান পড়ে,
নিরালোক অপরাহ্নে বেহাগের সুর- দিগন্ত হা হা করে,
পিষ্ট দ্রাক্ষার মত ফেটে যায় স্ফুরিত হৃদয়-অপার বেদনা,
ঘাস ও মৃত্তিকা ছেড়ে উন্মাদের মত নিরদ্দিষ্ট পথের দিকে
পরিক্রমা; কোথায় যেন কোথায় যেন- মনে পড়ে কি পড়ে না,
নৈ:শব্দ ঘুম ক্লান্তিহীন বেদনাহীন কোনও নিগূঢ় দেশ বুঝি রয়ে গেছে।
ছবিঃ প্রেম, কিলি গৃউইগ,মহারাষ্ট্র।
লেখকঃ ভবতোষ হালদার